Sunday 26 August 2012

আমার প্রিয় ইলশেগুঁড়ি


আমার প্রিয় ইলশেগুঁড়ি, কেমন আছিস, বল্?
আর কাকিমা কেমন আছেন? কেয়া দি? চঞ্চল?
আর বাকি সব খবর কি রে? কেমন শ্বশুরবাড়ি?
বিয়ের দিনে যাই নি বলে রাগ করেছিস ভারি...
তাই না...? আমি যাই নি তা নয়... যাই নি বলা ভুল...
দু'দিন আগে চিঠি পেলাম... আমার তো ইস্কুল!
একলা আমি... চারটে ক্লাসের একলা দিদিমনি...
কলকাতাতে যাওয়া-আসা... সময় অনেকক্ষণই
লাগতো, জানিস... তার ওপরে মায়ের শরীর যা না!
আর কত কি বলবো তোকে? সবই তো তোর জানা...
তাই ভাবলাম, বৃষ্টি লিখি... রোদ লিখে দিই তোকে...
ছায়ায় ঢাকা পথ লিখে দিই... স্বপ্ন লিখি চোখে...!

মনে পড়ছে, জানিস... তোদের দেউল ছাড়ার আগে
সেই যে আমরা হেঁটেছিলাম... ভাবতে অবাক লাগে...
কালিপাহাড়ি পেরিয়ে গেলে রেললাইন'টা পড়ে...
মনে পড়ে, ইলশেগুঁড়ি, লাইন ধরে ধরে
কত'টা পথ হেঁটেছিলাম... পিছন ফেলে গাঁ-টা,
ব্রিজ পেরিয়ে... ক্ষেত পেরিয়ে... অনন্তকাল হাঁটা...
'দেউল হল্ট' ছাড়িয়ে গিয়ে বাঁ'দিকে সেই পোড়ো
ভূতের বাড়ি...? কত কথা... আমারও আর তোরও
ছিল সেদিন... ভেবেছিলাম, তুই-ই চলে গেলে,
আমার কথা ঐ বাড়িতেই লুকিয়ে যাবো ফেলে...

কত কথাই থাকতো তখন...! কাদের নিয়ে কথা??
কোথায় তারা, ইলশেগুঁড়ি...? ভীষণ অসুস্থতা
সমস্তদিক ঢাকছে, জানিস? মা'কে নিয়ে ভাবি...
বাইশখানা ওষুধ দিনের... আমার ঘরের চাবি
ওই আঁচলেই... আমিও তো ভাই ওই আঁচলেই বাঁধা...
লড়ছি, জানিস...! তবুও কেমন মিলছে না এই ধাঁধা...!
বড়দি তো সেই ঘরেই বসে; বৌ'ভাত আর বিয়ে
সবই বেকার... মেয়ে বলে কেউ যায় নি ওকে নিয়ে;
কি যে ওরা চেয়েছিল? গয়না, শরীর, ভিটে...?
দু'দিন বাদে ফিরলো; সাথে অগুনতি কালশিটে...
বড়দি আমার সাথেই আছে... চুলোয় নিয়ম-রীতি!
সে সব কথা হয় নি বলা... হয় নি লেখা চিঠি...
আসল কথা, লিখবো'টা কি? পাইনি খুঁজে কূল;
সেই থেকে এই তিনটি প্রানী... ভরসা আমার স্কুল...
তুই বলবি, "কেন? অমল...?"... আমার হাসির পালা...
"আমায় ভালোবাসে অমল? ও হবে আটচালা...?"
বলেছিলাম... মনে আছে? পোড়ো বাড়ির ছাদে?
আমার হাসি আটকে গেছে আমার কথার ফাঁদে;

ঘাটতি, জানিস, দারুন ঘাটতি পড়েছে সংযমে,
সারা'টা ক্ষন কেমন জানি ভয় করে ছমছমে...
রাতের বেলা একলা শুলে পূবমুখো এই ঘরে
রেলের লাইন ধরে হাঁটা ভীষণ মনে পড়ে...
সেদিন আকাশ রাঙিয়ে ছিল শিমূল ফুলে ফুলে...
গানও একটা বেঁধেছিলাম... সুর'টা গেছি ভুলে...
কথাগুলো...? কথাগুলো দারুন অভিমানে
মুখোস পরে হারিয়ে গেছে কুঠরি-অভিধানে...
তুই বলতিস, ছন্দ আছে আমার ভিতর নাকি!
ছন্নছাড়া খুঁজছি আমি ছন্দ মানে'টা কি?!
সাহসগুলো মরছে, জানিস... কপাল ফুটিফাটা...
কত'টা পথ? ইলশেগুঁড়ি... আর কত'টা হাঁটা...?

বাদ দে...! তুই ভালো থাকিস... ভালো রাখিস আরও...
তুমি আমার ইলশেগুঁড়ি, সবই তুমি পারো...
"তোর বিয়েতে........." এম্নি কত ফর্দ ছিল টোকা...
কোথায় সেসব? সময় কেমন বানিয়ে গেল বোকা...!
“নদীই দেবো” ভাবতে দেখি শুকিয়ে নদী সোঁতা...
বৃষ্টি দেবো... ছায়াও দেবো... সবই কথার কথা...
সত্যি করে তোর বিয়েতে কিচ্ছুটি নেই দেবার...
পারলে, তুই পদ্য ছেড়ে গল্প লিখিস এবার।