Monday 19 August 2013

কু-ঝিক-ঝিক


উলটপুরাণ গল্প গেল মেঘের বাড়ির রাস্তা দিয়ে,
ভালোবাসার,নাকি কাজের ওয়াস্তা দিয়ে...

কু-ঝিক-ঝিক মেসেজ এল, তিস্তাপারের স্নিগ্ধ আলো,
লক্ষ রঙের সবুজ দিয়ে চোখ ধোয়ালো!

চায়ের বাগান,মনখারাপি ঝগড়াগুলো... স্বাদ কষাটে,
আকাশ,নদী... সব ছবি'রা পেছন হাঁটে...

ঠোঁটের ওপর এক ফোঁটা কি?স্বপ্ন দেখি ভোরের আগে,
উচ্ছেফুলের মধুর মত মিষ্টি লাগে...

Friday 26 July 2013

ত্রিকোণের আগে


তোকে ছাড়া আমি কাটিয়ে এসেছি দিন,
তাই তোকে ছাড়া কাটাতে এসেছি ছুটি,
জানি,দোষ তুই ধরবি না সঙ্গীণ...
বড় জোর 'স্বার্থপর',বা 'হিংসুটি'...

বড় জোর অভিমান... তোর অজানিতে
ফন্দি পেতেছে বর্ষার মেঘে মেঘে,
আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিধি'তে
আমরা দু'জন বাদ পড়ে গেছি দেখে...

ঘষটানো দিন,রাত্তিরগুলো ভোঁতা,
চাবুক চালালো শাণিত বজ্রপাতে,
অস্থির দাবী,উত্তাপ...অন্যথা
হবেই আখেরে আমাকেও পস্তাতে!

ওরা সমুদ্রে মাদক মেশাতে পারে,
পাঁচখানি মুখ গুঁজে রাখে পাঁচ কানে,
আড়াল সরালে বিবস্ত্র করে ছাড়ে,
বহুভূজ আঁকে বোঝাতে প্রেমের মানে।

বিষ-তেতো হল আদুরে চায়ের লিকার,
মিশকালো স্রোতে নিজেকে দিচ্ছি সঁপে,
একজন আমি তোকেই করে না স্বীকার,
একজন পড়ে মরা-কটালের কোপে...

এখানে ডুবছি;সাগরে উথাল শ্রাবণ...
আর শীতঘুম তোর ঘরে-অন্দরে,
পারবো না;শেষে হয়তঃ ফিরেই যাবো...
তবু মাঝেমাঝে পারতে ইচ্ছে করে...!

Tuesday 2 July 2013

পাহাড়িয়া


এইখান থেকে মিনিট দশেক আর,
পাইনের সারি, চুলের কাঁটার বাঁক,
পেরিয়ে দ্বাপর যুগের অন্ধকার
ফিরছি; কোথায়, সে কথা বরং থাক...

খেয়ালের সাথে পথ পাকিয়েছে জট,
বাঁয়ে রয়ে গেল রুংলি রুংলিয়ট,
ঘুমেলা গ্রামের কোল জুড়ে ঘনঘোর,
ফিরছি, সে কথা না জানাই ভালো ওর।

নভেম্বরের তীক্ষ্ণ মহুয়া শীত,
তিস্তার বুকে ঘুমিয়েছে রঙ্গিত,
ধূসরে বিলীন সবুজাভ যত ঢেউ...
আমি যে ফিরেছি ওকে জানিওনা কেউ;

নিস্তব্ধতা নাম সহযাত্রীর,
কমলা স্বপ্ন কাঞ্চনজঙ্ঘার,
পাথুরে হচ্ছে পাইনাস রাত্রি...
পাহাড়, বলো না...! ও কি ফিরেছিল আর...?

Tuesday 25 June 2013

ঘুমজড়ানো


এক

একটা গাছের হলদেটে ফুল খুব ঝরেছে পাগলা ঝড়ে,
একটা আকাশ বিনীল রাতে ডুব দিয়েছে ভুলসাগরে;
                   একটা সবুজ গঙ্গাফড়িং
                   মেঘ হয়েছে রাত্তির দিন
একটা ছেলে ঘুম গিয়েছে চিঠির ঝাঁপি আগলে ধরে...



দুই

ঘুমজড়ানো রাত্রি এলে আমার কড়া নেড়ে
মাঝেমাঝেই তোর হাসি'রা আমায় খুঁজে ফেরে...
রাতবিরেতে উল্কা-ইমন দিব্বি খুঁজে আনিস,
সত্যি ছিলি? স্বপ্ন ছিলি? তুইও কি ছাই জানিস?



তিন

ঘুম ভিড় করে আনাচে-কানাচে,
কথার নৌকো নির্বাক স্রোতে,
জ্যোৎস্নার বাড়ি আঙুলের ভাঁজে,
স্বপ্নের বাসা ইনবাক্স'তে...

Wednesday 12 June 2013

কৈফিয়ত


"কি কারণে ছিল আঙুলে আঙুল... সহজিয়া ভালোবাসা...?"
"পকেট, হৃদয়, জীবন উপচে সময়ের ছিল বাসা।"

"কি কারণে আমি মাড়িয়ে এসেছি সব ছায়া উদ্ধত...?"
"সময়। সময় পিছলে যাচ্ছে জ্যান্ত মাছের মত।"

"কি কারণে আমি বিদ্ধ হলাম তীক্ষ্ণধার ছোবলে...?"
"শাস্তি হয়েছে। সময়ের কড়ি পুড়িয়ে এসেছো বলে..."

Wednesday 22 May 2013

এ্যাই ছেলেটা…!


রোজ সকালে এ্যালার্ম ডাকে; ঘুম ভাঙে তোর;
সকাল কি আর? প্রায় রাত্তির… ভোর বড়জোর
চারটে হবে; স্ট্রিটলাইটের একচোখে ঘুম,
চারকোলময় আকাশ তখন, পাড়া নিঝুম...
ঠিক তখনই একলা আলো তোরই ঘরে,
নিউমেরিকাল কিম্বা মাইক্রোপ্রসেসরে
চোখ ডোবে তোর সকাল সকাল; আর কিছু কি
কক্ষণও ঘুম ভাঙিয়েছে তোর? একটু ঝুঁকি
নতুন কোন স্বপ্ন দেখার…? ফুলের কথা,
গানের বুলি… ভাবতে পারিস? খুব অযথা?

এ্যাই ছেলেটা…! নাম কি যেন?
অনেক হল বই-খাতা আর পেন গোছানো…
অনেক হল রাতজাগা আর সকালজাগা……
নিয়মচাকা
একটুখানি ঘুরিয়ে দে না অন্য দিকে…
খেলতে শিখে
বেনিয়মের খেলবো খেলা সারা বিকেল…
সমস্ত রাত… পাশ আর ফেল
ভুলবি না হয়…? স্বপ্ন দিয়ে বুনবো রুমাল
দু’জন মিলে… সমস্ত রাত…! দুষ্টু সকাল
আসতে গেলে বকেই দেবো; বুনবো রুমাল……
......................................................................
......................................................................

দশ’টা বাজে… আমার দেরি কলেজ যাওয়ায়,
কোনোক্রমে টিফিন ফেলে দে-দৌড় লাগাই!
ভুল হয়ে যায় এ্যাসাইন্টমেন্ট প্রোগ্রামিং-এর,
বাসের সিঁড়ির ভেংচিকাটা হর-এক-দিনের;
তুইও থাকিস ঐ বাসেতেই; নামতে দেখি…
“গোমড়ামুখো!!” রিদ্ধি বলে… সত্যি? মেকি?
সন্তর্পণ ভাবনা আসে… তুই কি ভাসাস
দাগের ওপর আলতো দাগে, খুব অনায়াস
ইলেকট্রিকাল শেষের পাতা ছবির নেশায়…?
দিস না কি তুই রোদসকালে আলগোছে সায়?

এ্যাই ছেলেটা…! নাম কি যেন?
অনেক হল চুপবেহালায় সুর ভেজানো…!
অনেক হল মুখ লুকানো তোর হিসেবে…!
দ্যাখ কি ভেবে
ঝর্ণা সে এক পাগল তোকে ডেকে ডেকে…
কোথাত্থেকে
খবর সে তোর পেল আমি তা জানিনে;
যাই হোক, তুই কলম টেনে
লিখতে পারিস দু’এক কলম তাকেই নিয়ে…
ভিতরপোড়া স্বভাব’টা তোর তাড়িয়ে দিয়ে,
ভিজতে পারিস পশলা-কয়েক তাকেই নিয়ে....
..........................................................................
..........................................................................

কলেজফেরত সন্ধ্যে, বা ধর মাঝবিকেলে…
সেই অবেলায় আকাশমেয়ের কান্না এলে,
টইটুম্বুর সন্ধ্যেমুকুর, উন্মনা জুঁই…
ঝমঝমিয়ে ভিজছি আমি… সংযমী তুই…!!
ভাল্লাগে তোর? মন করে না ছুট্টে যেতে?
প্রত্যাশাদের চোখ এড়িয়ে অলক্ষিতে…
কাপাস তুলো… নদীর কিনার… অজস্র কাশ…
রোদের তিলক… মেঘজমানো স্বপ্নকেলাস…
আর কতদিন চশমা আড়াল দু’চোখ ভরে?
গুছিয়ে থাকা মনখারাপের সব খবরে…?
হয় না মনে একটা কোনো পাগলি নদী
“ফার্স্ট বয়” না, শুধুই তোকে চিনতো যদি…?

এ্যাই ছেলেটা…! নাম কি যেন?
অনেক হল ব্যথার ওপর মেঘ বিছানো…!
অনেক হল জবাবদিহি জনান্তিকে…!
আপত্তি কি?
দিনদুপুরে আরব-রাতে হারিয়ে গেলে...
কলম ফেলে
তুলির টানে শাহাজাদীর মকবরা’তে
পারিস না তুই চোখ ভাসাতে?
ধার তো নিতে পারিস বাঁধন, খামখেয়ালে…
নীলচে রঙের গল্প দিতাম এই আকালে…
বন্দীখামের খেয়াল দিতাম… খামখেয়ালে……!

Monday 13 May 2013

তিন টুকরো


এক

কাউকে দিলি নীলচে খাম... কাউকে দিলি মিথ্যে নাম,
কাউকে আবার মর্মবেদনা...
যা হোক,দিলি... দ্যাখ ফারাক...করতে দিলে আমায় ভাগ
সবার কথা ভাবাই যেত না।

দুই

অ্যালজেব্রা'কে বলেছি যে নখ বিঁধিয়ে দে আর নিংড়ে নে,
দিবি না যখন কলেজ-ফেরত সে'সব বর্ষা দিন এনে...
আমৃত্যু আমি হাতড়াতে পারি তবুও বিধাতা খুব জানেন,
প্রজাপতি জালে ধরা পড়া গেছে,ট্যাটু'তে হয়েছে পার্মানেন্ট।

তিন

যেই  রোদ্দুর হলো উন্মাদ,যেই বর্ষা অবিশ্রান্ত,
তুই ঘরমুখে দিলি একছুট ঘড়ি দ্যাখাতে দিয়ে ক্ষান্ত;
তুই ছুটে চলে গেলি আড়ালে,
আর দশ'টি মিনিট দাঁড়ালে
পায়ে হাঁটুজল,রোদে ঘামস্নান,আমি আসতাম!আসতাম তো!

Thursday 9 May 2013

জন্মদিনের চিঠি



শুভ জন্মদিন,কবি!
সেই বাসন্তী রঙের পঁচিশে বৈশাখ আবার এসে পড়লো,দ্যাখো!কেমন আছো,তুমি? আমার কথা ভাবছিলে?
নাঃ! কেন বা ভাববে বল?হয়তঃ তুমি রাগ করবে চিঠি পেয়ে খানিক;মনে করবে,এতদিনে সময় হল?মনে করবে,জন্মদিনের তারিখ দেখে চিঠি লিখতে বসেছি আয়োজন করে... কথা তো হয়েছিল রোজ কথা হবে... দৈনন্দিনে জড়িয়ে থাকবো তোমাকে... যোগাযোগ হবে অবিচ্ছিন্ন,অক্লান্ত,অনাবিল...
কথা আমি রাখি নি বটে;রাগ তুমি করতেই পারো।ব্যাখ্যা করতে গেলে কথায় কথায় দু’পাতার চিঠি দশ পাতার হবে শুধু,তা ছাড়া আর হবে না কিছুই... তাই দোষ বরং স্বীকার করে নিই মাথা নিচু করে... আগে যেমন করে লিখতাম,সেভাবে আর সত্যিই তোমায় লেখা হয় না...
মনে আছে,তোমায় যে দিন প্রথম চিঠি লিখেছিলাম?সে দিন এমনই কোনো এক পঁচিশে বৈশাখ...রজনীগন্ধার পেলব ছোঁয়ায় সন্ধ্যেটায় মিশে গেছিল এক আশ্চর্য্য স্নিগ্ধতা... মনে আছে? লিখেছিলাম,

“ ওগো বাঁশিওআলা,

বাজাও তোমার বাঁশি,
শুনি আমার নূতন নাম”
— এই বলে তোমাকে প্রথম চিঠি লিখেছি,মনে আছে তো ?

আমি তোমার বাংলাদেশের মেয়ে ।

সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দেন নি
আমাকে মানুষ করে গড়তে—
রেখেছেন আধাআধি করে ।
অন্তরে বাহিরে মিল হয় নি
সেকালে আর আজকের কালে,
মিল হয় নি ব্যথায় আর বুদ্ধিতে,
মিল হয় নি শক্তিতে আর ইচ্ছায় ।
আমাকে তুলে দেন নি এ যুগের পারানি নৌকোয়,
চলা আটক করে ফেলে রেখেছেন
কালস্রোতের ও পারে বালুডাঙায় ।
সেখান থেকে দেখি
প্রখর আলোয় ঝাপসা দূরের জগৎ —
বিনা কারণে কাঙাল মন অধীর হয়ে ওঠে,
দুই হাত বাড়িয়ে দিই,
নাগাল পাই নে কিছুই কোনো দিকে ।


বেলা তো কাটে না,

বসে থাকি জোয়ার-জলের দিকে চেয়ে—
ভেসে যায় মুক্তি-পারের খেয়া,
ভেসে যায় ধনপতির ডিঙা,
ভেসে যায় চল্‌তি বেলার আলোছায়া ।

সেই স্নিগ্ধ,পেলব সাঁঝে তোমার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল,বরং তোমার নাম দিই আমার নির্ভরতা; তোমার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল আমার অযথা ক্লান্ত দিনপাতের এই বুঝি ‘শেষ পরিপূর্ণতা’...আমার ‘আলোর ভুবন’...ধীরে ধীরে একটি একটি করে দরজা খুলে ফেললে সেই ভুবনে আশ্রয় দেবে তুমি...মনে পড়ে,তুমি একবার লিখেছিলে চিঠির উত্তরে,“প্রথার সঙ্গে বুদ্ধির,বুদ্ধির সঙ্গে ইচ্ছার,ইচ্ছার সঙ্গে কাজের কোনোরকম অহর্নিশ খিটিমিটি না ঘটে যেন...” আর আমার? আমার তো জন্মেও ‘মিল হয় নি ব্যথায় আর বুদ্ধিতে,মিল হয় নি শক্তিতে আর ইচ্ছায়...’ তাই আমার চিরকাল মাথা নিচু তোমার কাছে,চিরকাল হাতে ভিক্ষাপাত্র,চিরকাল নিলাজ,অসহায় চিত্‌কার “চাই! চাই!” “দাও! দাও!”... ...আর কাকে বলবো বল? কার কাছে রাখবো দাবী? তোমার সাথেই তো আমার সখ্য,কবি... তোমার কাছেই তো আমার আবদার... তোমায় আমি বর্ম করে রাখি মনের গলিঘুঁজি’তে সর্বনাশ ঘটার মূহুর্তে,তোমায় আমি আঁকড়ে ধরি মনের চোরাঘুর্ণি’তে তলিয়ে যাবার আগে...তোমায় ভালোবাসি বিহ্বল হয়ে; রঙরঙিন, ভাষ্যহীন সে ভালোবাসা...


এমন সময় বাজে তোমার বাঁশি

ভরা জীবনের সুরে ।
মরা দিনের নাড়ীর মধ্যে
দব্‌দবিয়ে ফিরে আসে প্রাণের বেগ ।


কী বাজাও তুমি ,

জানি নে সে সুর জাগায় কার মনে কী ব্যথা ।
বুঝি বাজাও পঞ্চমরাগে
দক্ষিণ হাওয়ার নবযৌবনের ভাটিয়ারি ।
শুনতে শুনতে নিজেকে মনে হয় —
যে ছিল পাহাড়তলির ঝির্‌ঝিরে নদী ,
তার বুকে হঠাৎ উঠেছে ঘনিয়ে
শ্রাবণের বাদলরাত্রি ।
সকালে উঠে দেখা যায় পাড়ি গেছে ভেসে ,
একগুঁয়ে পাথরগুলোকে ঠেলা দিচ্ছে
অসহ্য স্রোতের ঘূর্ণি-মাতন ।


আমার রক্তে নিয়ে আসে তোমার সুর—

ঝড়ের ডাক,বন্যার ডাক,আগুনের ডাক,
পাঁজরের উপরে আছাড়-খাওয়া
মরণ-সাগরের ডাক,
ঘরের শিকল-নাড়া উদাসী হাওয়ার ডাক ।
যেন হাঁক দিয়ে আসে
অপূর্ণের সংকীর্ণ খাদে
পূর্ণ স্রোতের ডাকাতি,
ছিনিয়ে নেবে,ভাসিয়ে দেবে বুঝি ।
অঙ্গে অঙ্গে পাক দিয়ে ওঠে
কালবৈশাখীর ঘূর্ণি-মার-খাওয়া
অরণ্যের বকুনি ।


ডানা দেয় নি বিধাতা,

তোমার গান দিয়েছে আমার স্বপ্নে
ঝোড়ো আকাশে উড়ো প্রাণের পাগলামি ।

তোমার চিঠি মনে পড়ে সে সব পাগলামির মূহর্তগুলোয়। মনে পড়ে,তুমি লিখেছিলে একখানি চিঠি’তে,“একবার যদি এই রুদ্ধ জীবনকে খুব উদ্দাম,উচ্ছৃঙ্খলভাবে ছাড়া দিতে পারতুম, একেবারে দিগ্‌বিদিকে ঢেউ খেলিয়ে ঝড় বইয়ে দিতুম...”তারপরেই আবার মন খারাপ করে লিখেছিলে,“কিন্তু আমি বেদুইন নই। বাঙালী।”

আমারও হয়েছে সেই দশা,জানো তো!উত্তেজনার পারদে যত আঁচ লাগে তোমার সুরের, তোমার কথার,তত যেন আকাশজোড়া ধূসর বিষাদ চেপে ধরে আমাকে। উন্মনা সমস্ত কল্পনা শেষমেষ বালিশে গুমরে মরে। আমি যে বড় সাধারণ বাঙালী মেয়ে,কবি...

ঘরে কাজ করি শান্ত হয়ে ;

সবাই বলে ‘ভালো' ।
তারা দেখে আমার ইচ্ছার নেই জোর ,
সাড়া নেই লোভের ,
ঝাপট লাগে মাথার উপর ,
ধুলোয় লুটোই মাথা ।
দুরন্ত ঠেলায় নিষেধের পাহারা কাত করে ফেলি
নেই এমন বুকের পাটা ;
কঠিন করে জানি নে ভালোবাসতে ,
কাঁদতে শুধু জানি ,
জানি এলিয়ে পড়তে পায়ে ।


আমি যে এরকমই।মনখারাপিয়া মেয়ে।বিষন্নতাতেই সুখ আমার সবাই বলে।মনে পড়ে সেইবার কবি? সেই যে একজনের কথা লিখেছিলাম তোমায়? সে কখনো উজ্জ্বল,কখনো স্নিগ্ধ, কখনো বাউল,কখনো উদাস- আমি হলাম পাগল আর সে হল আমার পাগলামি।তারপর... তারপর কোথা থেকে কি হল... ঝড় উঠল ভীষণ- নিদারুন,নৃশংস,কালবৈশাখী – আমার ‘আলোর বাসা’ ধূলিসাৎ করে বিদেয় হল সে- তখন আমার কান্না থামাতে পারেনি কেউ- তুমি এলে,হাত ধরে বসলে পাশে,চিঠি’তে গান দিয়ে হাতের মুঠোয় দিলে গুঁজে-
... ... যদি আর কারে ভালোবাসো,যদি আর ফিরে নাহি আসো
তবে তুমি যাহা চাও,তাই যেন পাও
আমি যত দুখ পাই গো...
আমার পরাণ যাহা চায়,
তুমি তাই,তুমি তাই গো... ...
তুমি আমার উত্তরণ,কবি; তুমি আমার প্রিয়তম সখা। এ সখ্যতা কি আজকের,বলো? মানছি, তোমার ভিজে চোখের পাতার দিকে আমি মন দিয়ে চাইনি কখনো। তোমাকে ‘ঈশ্বর’ ভেবে প্রার্থনার ফিরিস্তি শুনিয়েছি আজন্মকাল। জানি তুমি রাগ করে আছো,খারাপ লেগেছে তোমার- ভেবেছ কি স্বার্থপর আমি! কি ভীষণ নির্লজ্জ! তবু সত্যি কথা কি বলতো? তুমি যদি চিঠির জবাব না দাও রাগ করে,যদি সত্যি সত্যি দূরে ঠেলে দিতে চাও আমায়,তুমি আমার কাছ থেকে কিন্তু কাড়তে পারবে না কিচ্ছু। কেউ পারবেনা তোমাকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে। তুমি কাছে থাকলে সে আমার আনন্দ বসন্ত -তুমি দূরে থাকলে সে আমার বেদনার নিদাঘ- তবু সে তুমিই- তুমি নানা রূপে!
আলো-অন্ধকারে তোমাকেই চিরকাল দেখেছি...ভেবেছি,
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফোটাক তারা নব নব...
তোমায় গিয়ে মেশে আমার বিশ্বাস আর আলো-আঁধারি... তোমায় গিয়ে এক হয়ে যায় আমার চাওয়া আর পাওয়া... আচ্ছা,তোমার কখনো মনে হয়,এত ভালোবাসার জন্য বোধ হয় একটু আবডাল ভালো?
বাঁশিওআলা ,
হয়তো আমাকে দেখতে চেয়েছ তুমি ।
জানি নে ঠিক জায়গাটি কোথায়,
ঠিক সময় কখন,
চিনবে কেমন করে ।
দোসর-হারা আষাঢ়ের ঝিল্লিঝনক রাত্রে
সেই নারী তো ছায়ারূপে
গেছে তোমার অভিসারে চোখ-এড়ানো পথে ।
সেই অজানাকে কত বসন্তে
পরিয়েছ ছন্দের মালা ,
শুকোবে না তার ফুল ।


তোমার ডাক শুনে একদিন

ঘরপোষা নির্জীব মেয়ে
অন্ধকার কোণ থেকে
বেরিয়ে এল ঘোমটা-খসা নারী ।
যেন সে হঠাৎ-গাওয়া নতুন ছন্দ বাল্মীকির ,
চমক লাগালো তোমাকেই ।
সে নামবে না গানের আসন থেকে ;
সে লিখবে তোমাকে চিঠি
রাগিণীর আবছায়ায় বসে ।
তুমি জানবে না তার ঠিকানা ।


ওগো বাঁশিওআলা ,

সে থাক্‌ তোমার বাঁশির সুরের দূরত্বে ।

Thursday 18 April 2013

যদি লিখতেও বসি


যদি লিখতেও বসি তোকে কোনোদিন, নিঃসঙ্কোচে আমি বলে দিতে পারি, সেইসব চিঠিগুলো শুরুও হবে না কক্ষনো। অত্তো সময় কই?কত কাজে সারাদিন মেতে আছি বল?ব্যস্ততা লেপে দেওয়া রাশি রাশি জঞ্জালে ডুবে আছি।
আটকে রয়েছি,স্থির,আকাশ উপচে পড়া শূণ্যের মাঝখানটিতে...
...অবসর?
অভাব'টা সেখানেই আসলে,জানিস।


যদি বা পেরিয়ে যাই প্রথম লাইনক'টা,আদবকায়দা মেনে সম্বোধনের পাট..."কেমন আছিস? ভালো...?",জীর্ণ প্রশ্ন কিছু, সদুত্তরহীন...কলম নুইয়ে যাবে তারপরে এসে।...কি নিয়ে এগোবে কথা?
তোর প্যাস্টেলটা'র বান্ধবী কবিতা'টি বাড়ি বদলেছে।আমার দু'হাত জুড়ে 'সংসার' লেখা;চিঠির বয়ান তাই শোনাবে জটিল,সাম্প্রদায়িক কোনো দাঙ্গার মত...
কি ভাবে এগোবে কথা?
...বিষয়?
অভাব'টা সেখানেই আসলে,জানিস।



যদি কোনোক্রমে,কোনো চিঠি,শেষটেশ হয়'ও কখনো,'ইতি, তোর'ই' লিখে হাতড়াবো শেষ শব্দ'টা...আদরের ডাকনাম থমকে ছড়িয়ে যাবে, ঝুটো মুক্তোর মালা...নকল,নিটোল...
আস্তানা উতখাত হয়ে যাবে বুদবুদ জলছবিদের...
'ইতি,তোর' কে?
পরিচয়...
অভাব'টা সেখানেই আসলে জানিস...

Tuesday 2 April 2013

কোপাই


ছায়াদিন নদীখাতটুকু ছুঁয়ে আনাড়ি খেলায় মাতলো খুব...
গোধূলি ডোবালো নগ্ন দুটি পা ছুটি-জলে নেমে ধাপে ধাপে,
তাঁতের শাড়ির পাড় একখানি পথ ছুটে চলে গেছে কবে
লালচে পায়ের ধুলো ছাপে...
ছুটি-জলে নেমে ধাপে ধাপে...

বুনোফুলে আস্কারা... শেষবেলা... রোদগুলো বড় বেহায়া যে...
"ও সাঁঝ...!! কাঁধের পড়ন্ত চুল একটু সরাবো...?"... খুনসুটি...!
সে চুল চুঁইয়ে পড়ে সাতরঙা ঘুম... না আদর...? বোঝানো দায়...
দ্বিধা... দ্বিধা ভাবে হাতদুটি...
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা... খুনসুটি...!

রূপোলী কোমরে ভাঙা ভাঙা ছায়া স্পর্শ আঁকলো... শব্দ কই...?
হাওয়া বদলালো মেঘেদের ভিড়ে... ভরসা জমলো আকাশে লীন,
উষ্ণতা ছুঁলো আঙুলের শীত... সোহাগ নামের গান হল
কুয়াশাস্নাত সাঁঝকালীন...
ভরসা জমলো... অন্তহীন...

ছায়াদিন নদীখাতে নেমে গেল... গাঢ় নীল খেলা ছোঁয়াছুঁয়ি...
ঘাসে মুখ ঘষে গাঢ়তর নীল হল কতগুলো বেভুল সুর...
সব গলে গিয়ে এ বাউল শীতে “আমরা-দু'জন” হয়ে গেল...
আমাদের বাড়ি অচিনপুর...
আমাদের বাড়ি.............

Thursday 14 March 2013

ঘর গোছানোর ছড়া


কম্‌লা রেখো ঘুমপাহাড়ে,
সব মোহরে নীলচে ভ্রমর,
আমার ভেতর তোমায় রেখো
আর আমাকে তোমার ভেতর।

সুটকেসেতে বনপলাশী
রেলিং যেন হয় আকাশি
ডানার যাওয়া-আসায় রেখো
চমক লাগা ফুস্‌মন্তর...!
তোমার ভেতর আমায় রেখো
আর আমাকে তোমার ভেতর।

ছন্দ রেখো ভুল-ইমনে,
আয়না রেখো সইবিহনে...
ছদ্মনামে 'তুমি'ই বোলো,
ডাকনামেতে বলিস দোসর...
তোর ভেতরে আমায় রাখিস,
নিজেও থাকিস আমার ভেতর।

Friday 1 March 2013

মুঠোফোন

মেঘালী রোদ, ভেজা সরোদ, নিষাদে নীল...
বৃষ্টি ধোয়, দৃষ্টি ছোঁয় লুকোনো তিল...
সে ইতিহাস; ঘুরেছে মাস... মার্চ এখন,
শীত খুঁটে তিতকুটে তেভাগা মন...

Monday 25 February 2013

রাত্রি-ভোর


রাতভোর চাঁদ একা একেবারে! চুপচাপ। ওপরওয়ালারও ভরসা ছিল না কিনা ভালোবাসায়একটা মাত্র চাঁদের জন্য তাই লাখ লাখ তারার পাহারাবলো,কোনো মানে হয়?!

তাই সারারাত চাঁদের ওপর
ওদের খবরদারী
চাঁদের সাথে এক এক করে
সব তারাদের আড়ি...
আর আড়ি তো হবেই... পাহারাদার তো আর বন্ধু হয় না। রাতভোর তাই একা চাঁদএকা,ডুবেছিল, রেগেও ছিল বোধ হয়; পাগলি মেয়ে রে!! কার ওপরে এত্তো অভিমান? সে বুঝি বোঝে...?
এদিকে তখন আমার জানালার গরাদগুলোতেও পালকের মত হিম জড়াতে শুরু করেছে... রাতঘড়ি এগোলেই এমনটা হয় মাঝে মাঝে... সে সব রাত বদলে যায় তখন...

সে সব রাতে হিমেল হাওয়ায় মুক্তো বয়...
সে সব রাতে টুপকথারা শিশির হয়...
নুড়ির মতন স্বপ্ন ছড়ায় রাত-বনে
সময় আমার দাওয়ায় বসে ঘুম শোনে...
সেদিনও ঠিক তেমনি... মাঝরাতের ডাকে আমার একখানা চিঠি আসার কথা, তাই জেগেই বসে আছি
তখনই চুপিসাড়ে ডাকলো চাঁদ,“এ্যাই!! গল্প জানো? গল্প বলো না...!!
বললাম, “হ্যাঁ... জানি না আবার... কত গল্প জানি!! কি রকমটা শুনবে বল?
গল্প আছে খানদানি... খুব সোনালী,জাফরানি...
জমকালো সেই গল্পগুলো... শুনবে কি?"
" উম্‌ম্‌ম্‌... নাহ্‌... আর কিছু আছে নাকি?"
" একটু ভেজা আসমানি... সেই গল্পও খুব জানি!
কিন্তু অনেক অনেক পরত... গুনবে কি?"
" উহু... অত ধৈর্য্য নেই গো! আর? আর কি গল্প জানো?"
" খুব হালকা মনগড়া... প্রজাপতির রঙ-করা...
বেলা শুরুর খেলার কথা... তাও জানি..."
"সে তো বড্ড চেনা গল্প! নতুন কিছু?"
" উন্মনা কু-ঝিকঝিকে... কালোর ছোঁয়া সবদিকে...
আঁধার-আঁধার গল্পসাঁতার? সাবধানী...??"
নাহ্‌! তাও দেখি নাপসন্দ্‌ চাঁদের... গালে হাত দিয়ে খুব খানিক কি ভেবে নিলো ও; তারপর বলল,সেই যে সেদিন রাতে যেটা ভেবে ভেবে খালি খালি কাঁদছিলে,সেইটে বল... সেইটে শুনব...
চুপ করে ভাবলাম খানিক, বলব...?! নাকি...? বলেই দি... কে আর শুনছে?
বললাম,“কাছ ঘেঁষে বোসো তবে... বলি শোনো,গল্প বললে ভুলই হবে... ওওওই যে দেখেছো,পিচঢালা সড়ক যেখানে হোঁচট খেয়ে পড়েছে লালমাটির পথটার গায়ে,ওই সড়কের মোড়ে যে বুড়িমায়ের পাতার ঘর,তাকে জিগ্যেস কোরো;সে বলে দেবে,যা বলছি তার সঅঅব সত্যি... এক যে ছিল কন্যা...
—“দূর, দূর... এটা তো পুরোনো গল্প...শুরু করা মাত্র প্রতিবাদ করে উঠল চাঁদ, “আমি জানি এটা...
—“না গো না...”, হেসে বললাম আমি, “এটা সেটা নয়... এটা কেউ জানে না... বলি,শোনো চুপটি করে...
এক যে ছিল কন্যা! বৃষ্টিধোয়া ধানের শিষের মতন তার রঙ... সন্ধ্যেবেলার যমুনানদীর মতন তার একপিঠ চুল... আর শিশিরভেজা দুব্বোঘাসের মতন তার মন...
—“তারমানে একেবারে রাজকন্যের মতন সুন্দর?” আবার মাঝপথে ফোড়ন কাটল চাঁদ।
—“দূর! তুমি না বড্ড জ্বালাতন কর... চুপ করে শোনো না!রেগেমেগে বললাম আমি, “আমি বলেছি বুঝি রাজকন্যের মতন?? একবারও বুঝি বলেছি,যে সুন্দর?? রাজকন্যে কেন হতে যাবে? এক্কেবারে চেনা কারো মতন... ধর তোমার মতন... বা ধর আমার মতন... বুঝলে? এবার শোন...
...সে ফুল আর পাখি খুব ভালবাসত... আকাশী নীলরং দেখলেই খুশি হয়ে উঠত... বৃষ্টি হলে দেদার ভিজত... মনভালো আর মনখারাপে গান গাইতো... আর মনকেমনে উপুর হয়ে শুয়ে,চুল এলিয়ে দিয়ে অনেকখানি কেঁদে নিত...
ঐ যা! দেখেছ? সে মেয়ের নামটাই তো বলা হয় নি...! তার নাম ধর..... আনমনা!
— “বাহ! বেশ ত! তারপর?”
— “তারপর? তারপর একদিন কিন্তু গল্পটা আর শুধু আনমনের রইল না! আরেকজন কে জানে কখন এসে নিজের নাম লিখিয়ে গেল! তার নাম ধর...... আকাশ!
তার অনেক আলো,অনেক হাসি আর অনেকখানি প্রাণ... অনেক বড় মনও...
— “এই যা!জানলার পাশ থেকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল একদল মেঘ;ওরা যে কখন গুটিগুটি এসে ভিড় জমিয়েছে দেখিই নি...
— “এটা তো সেই আগের গল্পটার মতই হয়ে গেল...”, একসাথে বলে উঠল ওরা...
—“না না... হতেই পারেনা... শেষ অব্দি শোন তো...
কতদূর যেন হয়েছিল..? ...হ্যাঁ, 
অনেক আলো,অনেক হাসি,অনেকখানি প্রাণ আর অনেক বড় মন... আর তার সাথে আকাশের ছিল অনেক অনেক কথা... সেইসব কথাগুলো বলতো না কিন্তু আকাশ... লিখতোও না... সে খালি ছবি আঁকত...

ছবিরা সব গল্প যেন... খুব কাছে আর ভীষণ দূরে
বৃষ্টিদিনে দখিন হাওয়া; দারুন তুফান মাঝদুপুরে!
সব ছবিরাই খামখেয়ালী কথার বারিষ সঙ্গে আনে...
মানেবইয়েও কেউ-উ পড়েনি কখ্‌খনো সেই কথার মানে...!!
ঠিক এরকম ছিল আকাশের ছবিগুলো... তারা অনেক অনেক কথাও বলতো বটে... কিন্তু আনমনা তার কতক মানে বুঝত... কতক বুঝত না... তবুও সে সব কথা গান হয়ে বয়ে যেত ওকে জুড়ে... তখন ভালো লাগত... ভীষন ভাল লাগত...
কিন্তু কখনও কখনও রাগ হত... হিংসেও হত খুব... কে জানে কাকে নিয়ে এত কথা ওর?
ভাবত, কে জানে কে সে’? কেমন সে’?
ভাবত, কোন একদিন হয়তঃ আকাশ নিজেই এসে বলে যাবে তার নাম...
...আর লুকিয়ে লুকিয়ে ভাবত,“সে দিনটা যেন কখখনো না আসে...!!
শুনেছি নাকি পদ্মডাঁটার তুলিটাতে জ্যোত্স্না ভরে নিয়ে সারারাত ধরে আকাশ সেই তার কথা আঁকতো... আর ভোরবেলার হাওয়াতে সেসব ছবি উড়ে এসে যখন আনমনের কাছে পৌঁছাতো,তখন সে হেসে মাতাবে না কেঁদে ভাসাবে বুঝতেই পারত না... আচ্ছা,তুমি বুঝি আকাশকে জ্যোত্স্না ধার দিয়েছিলে, চাঁদ...?”
কোনো সাড়া নেই!
—“এ্যাই! গেলে কোথায়...?”
তাও উত্তর নেই!!
তাকিয়ে দেখি... ওম্মা! গল্প শুনতে শুনতে চাঁদটা কেমন ঘুমিয়ে গেছে!! তাই না দেখে মেঘেরা সব দৌড়ে গিয়ে ঢাকা দিল ওকে...
আমি বললাম,“একবারটি ডেকে দাও না! গল্পটা শেষ করে দিই...!!
তাই শুনে মেঘেরা সব ভীষন বিরক্ত-বিরক্ত মুখ করে বলল,
—“না না... আর হবে না... যাও যাও... ভারি তো গল্প...

মনখারাপি গল্প যত... ঘুমপাড়ানোর ওষুধ শুধু...
তালকাটা এই রাতের মত; উচ্ছেফুলের কালচে মধু...!!
যাও যাও... ওসব গল্প শেষ-টেশ হয় না... ওই যেমন আছে যেটুক আছে... অনেএএক আছে,ঢের আছে...
—“ইইইস!বেপরোয়া হয়ে বললাম আমি,“শেষ করলেই শেষ হবে... না করলেই নয়!! দাও না ডেকে...
—“না না... অনেক হয়েছে... যাও তো তুমি এখন...!রেগে রেগে বলে দিল ওরা...
মনখারাপ হয়ে গেল!

বদলে গেল স্বপ্ননুড়ি, আকাশপট...
জানলা জুড়ে ভিড় জমালো শিশিরজট
সময় টানে ছড় বেহালার...খুব ক্লিশে...!
কান পাতা দায় একশো মেঘের ফিস্‌ফিসে...
পালক-হিমগুলো সব হারিয়ে গেল... আর তারপর...
তারপর তুমুল বৃষ্টি নামল ভোররাতেকি বৃষ্টি! কি বৃষ্টি!
এদিকে মাঝরাতের ডাকে আমার একখানা চিঠি আসার কথা ছিলকোথায় কে? কেউ এল না!
মনখারাপটা রয়েই গেল...

Tuesday 12 February 2013

দু'পশলা



আকাশ ঘিরে মেঘ করেছে,সূয্যি গেল পাটে,
প্যালেট থেকে সব প্রুসিয়ান নামলো বাজার-হাটে...
আমার ঘরের চাল'টুকুনি নিষেধ-পাতায় ছাওয়া
ফাল্গুনি-ধুন শীতের মতন মেঘলা এ তল্লাটে...
চিলতে শরীর ইচ্ছেগুলোর চুল ওড়ালো হাওয়া,
তোমার মতন দেখতে ধোঁয়া চায়ের পেয়ালাতে...
তক্ষুণি মেঘ খয়েরি হল,ধূসর ঘরের দাওয়া,
বৃষ্টিবিহীন মেঘ আকাশে,সূয্যি গেছে পাটে...


আবার সেদিন জ্যৈষ্ঠ প্রবল,মেঘ-ভাঁড়ারে টান,
টেবিল জুড়ে ছড়িয়ে দিলাম যত্তো অভিমান।
ক্লান্তি দিয়ে ঘর নিকোতেই দিন গড়িয়ে সাঁঝ,
হঠাত চিঠি...!তার গায়ে এক খুব চেনা আঘ্রাণ!
গুপ্তধনের বসতবাড়ি ওই চিঠিটির ভাঁজ,
গুমর ভুলে কাজলা আকাশ ভাসালো সাম্পান...
হিরের ফোঁটার কাঁকন,আমি মূহুর্তে মুমতাজ,
বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর নদেয় এলো বান...

Saturday 26 January 2013

হঠাৎ করে মাঝদুপুরে


আজকে আমার হাফ্‌ বেলা অফ!
নূন শো যাবি? ইচ্ছে হলে...
নইলে ছবি আঁকবি আমার?
বলছিলি... রঙ না, চারকোলে...

আঁকবি? যদি ক্লান্ত থাকিস...
তেম্‌নি হলে ব্যালকনি'তে
নিখাদ খানিক আড্ডা দেবো...?
সঙ্গে চুমুক ব্ল্যাক্‌কফিতে!

সব অভিযোগ, খারাপ লাগা
খাটের তলায় হচ্ছে জমা...
তুই নাকি তোর 'বসের চ্যালা'
'বিজ্ঞ' আমি... 'ব্যস্ততমা'...

সব ধুয়ে যাক, বৃষ্টি নামুক
ছাদ ভাসিয়ে; দারুণ ছাঁটে
পর্দা ভিজে সপ্‌সপে আর
আবছা হরফ বইমলাটে...

তুই আর আমি কেবল থাকি,
বৃষ্টি ঢাকুক সব ধূসরে......
'দুত্তেরি', ফের পড়ল মনে,
'আজকে তো তুই নেই শহরে...!'

Tuesday 1 January 2013

নিবি...?


কত কি লিখিস তুই...! আমি অত পারিনা...!
লিখতে কি আর ইচ্ছে করে না,বল?
যখন চুপের ঘোরে,আলতো করে ঘুমায় নদীর পাড়...
যখন ঘুমের ধূয়া রাত-মহুয়া প্রলাপ বকে তার...
সত্যি বলছি,খুব লিখতে ইচ্ছে করে... কিন্তু আমি যে অত পারিনা!!

তুই কিন্তু খুব পারিস... ইচ্ছে হলেই কটা শব্দ দিয়ে রঙ তুলি বানিয়ে নিয়ে যা খুশি তাই লিখে ফেলতে...
আকাশ ভর্তি করে বিষাদের উল ছড়িয়ে আমি ফাঁকা ছাদে একা বসে সোয়েটার বুনি......আর তুই...?
তুই তখন রঙ লিখিস,গন্ধ লিখিস,গদ্য লিখিস,ছন্দ লিখিস... আকাশভরা মেঘের ঢল লিখিস... চুঁইয়ে-পড়া বৃষ্টির জল লিখিস...
বেগনি রঙের ধুতরো লিখিস... ভাঙা চুড়ির টুকরো লিখিস...
গলা-জড়ানো রাত লিখিস... সন্ধ্যের সওগাত লিখিস...
আর আমি দেখি... শুধু দেখি... সব অনুভব কথা ভুলে যায় নিমেষে... বুনতে বুনতে ঘর ভুল হয়ে যায়...!! কত কি যে ভাবি...? সেসব আর বলাই হয় না তোকে!
ভাবি বলবো,একদিন যদি একটা গল্প লিখিস তুই... বেশ হবে তাহলে! নীলচে সবুজ রঙের গল্প একটা...?!
মনভোলানো যত্ন নিয়ে... ভোররাত্রের স্বপ্ন নিয়ে...
আধেকটা ঢেউ ডানায় নিয়ে...তোকে নিয়ে আর আমায় নিয়ে...?!
বেশ হবে তাহলে!
বেশি বড় না; ছোটগল্পই লিখিস, কেমন...
কোথায় শুরু আর কোথায় শেষ,কেউ ধরতেই পারবে না...! দিব্বি চলবে শনশনিয়ে... আগুন জ্বলবে,শিশির পড়বে,শুকনো পাতাও খুব ঝরবে... প্রতি শব্দে হাজার-রঙের ফুল ফুটবে অগুনতি... পড়বে যখন বৃষ্টি তখন ভিজিয়ে দেবে ঝমঝমিয়ে...!!
বেশ হবে!!
কিন্তু কেমন করে শেষ হবে...?
তখন ভাবি জিগেস করবো তোকে,একেবারে শেষটুকুর জন্যে আমার একটা কবিতা নিবি রে?
কে জানে কত বছর ধরে,অনেক অনেক চেষ্টা করেএই একটা মাত্র কবিতা লিখেছি... তার চারটে মাত্র লাইন,
........ ঊষরবেলায় ধূসর মেঘের মিহিরঙ দিয়ে দিয়ে
আমি সোনালি গোধূলি পথ এঁকে নিতে পারি;
........ একবার ছুঁয়ে দ্যাখ আজ ওই কাঁটাতারটা পেরিয়ে
আমি হাত ধরে তোর মাঝনদীতে ফেরারি!!
নিবি...?