রাতভোর চাঁদ একা একেবারে! চুপচাপ। ওপরওয়ালারও ভরসা ছিল না কিনা
ভালোবাসায়— একটা মাত্র চাঁদের জন্য তাই লাখ লাখ তারার পাহারা—
বলো,কোনো মানে হয়?!
তাই সারারাত চাঁদের
ওপর
ওদের খবরদারী
চাঁদের সাথে এক এক করে
সব তারাদের আড়ি...
আর আড়ি তো হবেই...
পাহারাদার তো আর বন্ধু হয় না। রাতভোর তাই একা চাঁদ— একা,ডুবেছিল, রেগেও ছিল বোধ হয়; পাগলি মেয়ে রে!! কার ওপরে এত্তো অভিমান?
সে বুঝি বোঝে...?
এদিকে তখন আমার
জানালার গরাদগুলোতেও পালকের মত হিম জড়াতে শুরু করেছে... রাতঘড়ি এগোলেই এমনটা হয়
মাঝে মাঝে... সে সব রাত বদলে যায় তখন...
সে সব রাতে হিমেল
হাওয়ায় মুক্তো বয়...
সে সব রাতে টুপকথারা শিশির হয়...
নুড়ির মতন স্বপ্ন ছড়ায় রাত-বনে
সময় আমার দাওয়ায় বসে ঘুম শোনে...
সেদিনও ঠিক
তেমনি... মাঝরাতের ডাকে আমার একখানা চিঠি আসার কথা, তাই জেগেই বসে আছি—
তখনই চুপিসাড়ে ডাকলো চাঁদ,“এ্যাই!! গল্প জানো? গল্প বলো না...!!”
তখনই চুপিসাড়ে ডাকলো চাঁদ,“এ্যাই!! গল্প জানো? গল্প বলো না...!!”
বললাম, “হ্যাঁ...
জানি না আবার... কত গল্প জানি!! কি রকমটা শুনবে বল?
—গল্প আছে
খানদানি... খুব সোনালী,জাফরানি...
জমকালো সেই গল্পগুলো... শুনবে কি?"
জমকালো সেই গল্পগুলো... শুনবে কি?"
—" উম্ম্ম্... নাহ্...
আর কিছু আছে নাকি?"
—" একটু ভেজা আসমানি...
সেই গল্পও খুব জানি!
কিন্তু অনেক অনেক পরত... গুনবে কি?"
কিন্তু অনেক অনেক পরত... গুনবে কি?"
—" উহু... অত ধৈর্য্য নেই
গো! আর? আর কি গল্প জানো?"
—" খুব হালকা মনগড়া...
প্রজাপতির রঙ-করা...
বেলা শুরুর খেলার কথা... তাও জানি..."
বেলা শুরুর খেলার কথা... তাও জানি..."
—"সে তো বড্ড চেনা গল্প!
নতুন কিছু?"
—" উন্মনা কু-ঝিকঝিকে...
কালোর ছোঁয়া সবদিকে...
আঁধার-আঁধার গল্পসাঁতার? সাবধানী...??"
আঁধার-আঁধার গল্পসাঁতার? সাবধানী...??"
নাহ্! তাও দেখি নাপসন্দ্
চাঁদের... গালে হাত দিয়ে খুব খানিক কি ভেবে নিলো ও; তারপর বলল,“সেই যে সেদিন রাতে যেটা ভেবে ভেবে খালি খালি কাঁদছিলে,সেইটে বল... সেইটে শুনব...”
চুপ করে ভাবলাম
খানিক, বলব...?! নাকি...? বলেই দি... কে
আর শুনছে?
বললাম,“কাছ
ঘেঁষে বোসো তবে... বলি শোনো,গল্প বললে ভুলই হবে... ওওওই যে
দেখেছো,পিচঢালা সড়ক যেখানে হোঁচট খেয়ে পড়েছে লালমাটির পথটার
গায়ে,ওই সড়কের মোড়ে যে বুড়িমায়ের পাতার ঘর,তাকে জিগ্যেস কোরো;সে বলে দেবে,যা বলছি তার সঅঅব সত্যি... এক যে ছিল কন্যা...”
—“দূর, দূর...
এটা তো পুরোনো গল্প...” শুরু করা মাত্র প্রতিবাদ করে উঠল
চাঁদ, “আমি জানি এটা...”
—“না গো না...”, হেসে বললাম আমি, “এটা সেটা নয়... এটা কেউ জানে না...
বলি,শোনো চুপটি করে...
এক যে ছিল কন্যা!
বৃষ্টিধোয়া ধানের শিষের মতন তার রঙ... সন্ধ্যেবেলার যমুনানদীর মতন তার একপিঠ
চুল... আর শিশিরভেজা দুব্বোঘাসের মতন তার মন...”
—“তারমানে একেবারে রাজকন্যের
মতন সুন্দর?” আবার মাঝপথে ফোড়ন কাটল চাঁদ।
—“দূর! তুমি না বড্ড জ্বালাতন
কর... চুপ করে শোনো না!” রেগেমেগে বললাম আমি, “আমি বলেছি বুঝি রাজকন্যের মতন?? একবারও বুঝি বলেছি,যে সুন্দর?? রাজকন্যে কেন হতে যাবে? এক্কেবারে চেনা কারো মতন... ধর তোমার মতন... বা ধর আমার মতন... বুঝলে?
এবার শোন...
...সে ফুল আর পাখি খুব
ভালবাসত... আকাশী নীলরং দেখলেই খুশি হয়ে উঠত... বৃষ্টি হলে দেদার ভিজত... মনভালো
আর মনখারাপে গান গাইতো... আর মনকেমনে উপুর হয়ে শুয়ে,চুল
এলিয়ে দিয়ে অনেকখানি কেঁদে নিত...
ঐ যা! দেখেছ? সে মেয়ের নামটাই তো বলা হয় নি...! তার নাম ধর..... আনমনা!
ঐ যা! দেখেছ? সে মেয়ের নামটাই তো বলা হয় নি...! তার নাম ধর..... আনমনা!
— “বাহ! বেশ ত! তারপর?”
— “তারপর? তারপর একদিন কিন্তু গল্পটা আর শুধু আনমনের রইল না! আরেকজন কে জানে কখন এসে
নিজের নাম লিখিয়ে গেল! তার নাম ধর...... আকাশ!
তার অনেক আলো,অনেক হাসি আর অনেকখানি প্রাণ... অনেক বড় মনও...
তার অনেক আলো,অনেক হাসি আর অনেকখানি প্রাণ... অনেক বড় মনও...
— “এই যা!” জানলার পাশ থেকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল একদল মেঘ;ওরা যে
কখন গুটিগুটি এসে ভিড় জমিয়েছে দেখিই নি...
— “এটা তো সেই আগের গল্পটার
মতই হয়ে গেল...”, একসাথে বলে উঠল ওরা...
—“না না... হতেই পারেনা...
শেষ অব্দি শোন তো...
কতদূর যেন হয়েছিল..? ...হ্যাঁ, অনেক আলো,অনেক হাসি,অনেকখানি প্রাণ আর অনেক বড় মন... আর তার সাথে আকাশের ছিল অনেক অনেক কথা... সেইসব কথাগুলো বলতো না কিন্তু আকাশ... লিখতোও না... সে খালি ছবি আঁকত...
কতদূর যেন হয়েছিল..? ...হ্যাঁ, অনেক আলো,অনেক হাসি,অনেকখানি প্রাণ আর অনেক বড় মন... আর তার সাথে আকাশের ছিল অনেক অনেক কথা... সেইসব কথাগুলো বলতো না কিন্তু আকাশ... লিখতোও না... সে খালি ছবি আঁকত...
ছবিরা সব গল্প
যেন... খুব কাছে আর ভীষণ দূরে
বৃষ্টিদিনে দখিন হাওয়া; দারুন তুফান
মাঝদুপুরে!
সব ছবিরাই খামখেয়ালী কথার বারিষ সঙ্গে আনে...
মানেবইয়েও কেউ-উ পড়েনি কখ্খনো সেই কথার মানে...!!
ঠিক এরকম ছিল
আকাশের ছবিগুলো... তারা অনেক অনেক কথাও বলতো বটে... কিন্তু আনমনা তার কতক মানে
বুঝত... কতক বুঝত না... তবুও সে সব কথা গান হয়ে বয়ে যেত ওকে জুড়ে... তখন ভালো
লাগত... ভীষন ভাল লাগত...
কিন্তু কখনও কখনও
রাগ হত... হিংসেও হত খুব... কে জানে কাকে নিয়ে এত কথা ওর?
ভাবত, কে জানে কে ‘সে’? কেমন ‘সে’?
ভাবত, কোন একদিন হয়তঃ আকাশ নিজেই এসে বলে যাবে তার নাম...
...আর লুকিয়ে লুকিয়ে ভাবত,“সে দিনটা যেন কখখনো না আসে...!!”
ভাবত, কে জানে কে ‘সে’? কেমন ‘সে’?
ভাবত, কোন একদিন হয়তঃ আকাশ নিজেই এসে বলে যাবে তার নাম...
...আর লুকিয়ে লুকিয়ে ভাবত,“সে দিনটা যেন কখখনো না আসে...!!”
শুনেছি নাকি
পদ্মডাঁটার তুলিটাতে জ্যোত্স্না ভরে নিয়ে সারারাত ধরে আকাশ সেই তার কথা আঁকতো...
আর ভোরবেলার হাওয়াতে সেসব ছবি উড়ে এসে যখন আনমনের কাছে পৌঁছাতো,তখন
সে হেসে মাতাবে না কেঁদে ভাসাবে বুঝতেই পারত না... আচ্ছা,তুমি
বুঝি আকাশকে জ্যোত্স্না ধার দিয়েছিলে, চাঁদ...?”
কোনো সাড়া নেই!
—“এ্যাই! গেলে কোথায়...?”
তাও উত্তর নেই!!
তাকিয়ে দেখি... ওম্মা! গল্প শুনতে শুনতে চাঁদটা কেমন ঘুমিয়ে গেছে!! তাই না দেখে মেঘেরা সব দৌড়ে গিয়ে ঢাকা দিল ওকে...
তাকিয়ে দেখি... ওম্মা! গল্প শুনতে শুনতে চাঁদটা কেমন ঘুমিয়ে গেছে!! তাই না দেখে মেঘেরা সব দৌড়ে গিয়ে ঢাকা দিল ওকে...
আমি বললাম,“একবারটি
ডেকে দাও না! গল্পটা শেষ করে দিই...!!”
তাই শুনে মেঘেরা সব
ভীষন বিরক্ত-বিরক্ত মুখ করে বলল,
—“না না... আর হবে না... যাও যাও... ভারি তো গল্প...
—“না না... আর হবে না... যাও যাও... ভারি তো গল্প...
মনখারাপি গল্প
যত... ঘুমপাড়ানোর ওষুধ শুধু...
তালকাটা এই রাতের মত; উচ্ছেফুলের কালচে
মধু...!!
যাও যাও... ওসব
গল্প শেষ-টেশ হয় না... ওই যেমন আছে যেটুক আছে... অনেএএক আছে,ঢের
আছে...”
—“ইইইস!” বেপরোয়া হয়ে বললাম আমি,“শেষ করলেই শেষ হবে... না
করলেই নয়!! দাও না ডেকে...”
—“না না... অনেক হয়েছে... যাও তো তুমি এখন...!” রেগে রেগে বলে দিল ওরা...
—“না না... অনেক হয়েছে... যাও তো তুমি এখন...!” রেগে রেগে বলে দিল ওরা...
মনখারাপ হয়ে গেল!
বদলে গেল
স্বপ্ননুড়ি, আকাশপট...
জানলা জুড়ে ভিড় জমালো শিশিরজট
সময় টানে ছড় বেহালার...খুব ক্লিশে...!
কান পাতা দায় একশো মেঘের ফিস্ফিসে...
পালক-হিমগুলো সব
হারিয়ে গেল... আর তারপর...
তারপর তুমুল বৃষ্টি নামল ভোররাতে— কি বৃষ্টি! কি বৃষ্টি!
এদিকে মাঝরাতের ডাকে আমার একখানা চিঠি আসার কথা ছিল— কোথায় কে? কেউ এল না!
তারপর তুমুল বৃষ্টি নামল ভোররাতে— কি বৃষ্টি! কি বৃষ্টি!
এদিকে মাঝরাতের ডাকে আমার একখানা চিঠি আসার কথা ছিল— কোথায় কে? কেউ এল না!
মনখারাপটা রয়েই
গেল...