Friday 15 April 2016

আমার ঠিকানা'কে

অনতি-অতীত “কি খবর?” বলে যেই হকিকত-হাল পোঁছে,
বলে কোণামোড়া ডায়েরির পাতা, (হীরে, তুলে রাখা আলগোছে…)
“ঘাস-গালিচায় গান ভাসালাম,
অথবা হিসেবি ঝগড়ুটে শাম
সে’সব না’হয় বাদ’ই দিলাম… তবু সব ছবি যায় কি বাদ?
তুই যেইদিন রবার্ট ব্রুস? বা আমরা সবাই সিন্দাবাদ?”

রোদ নিচু হয়ে পড়ছে শনিবারের বইমেলায়। স্টলে সামলানো-দায় ভিড়। আর বুকের ভেতর ক্রমশঃ  বাড়ছে উদ্বেগ! প্রেস-সংক্রান্ত গোলমালে অসংখ্য বই-এর বাঁধাই-এ ভুল! বিক্রির মত বই হাতে ছিল খান চল্লিশেক। অথচঃ দিনের শেষে বই বিক্রি সেঞ্চুরি করে ফেলেছিল! কারণ, একটা ছেলে চোখের জ্বালার জন্যে হাতে-ধরা ব্লেডের ধার কমতে দেয় নি! স্টেপলারের পিনে ক্ষতবিক্ষত হাতে স্টল সাজিয়েছিল নতুন বইয়ের গন্ধ দিয়ে...

ঘন্টা আটেক টানা এঁকে গেলে কতবার হয় নিব্‌ ভোঁতা?
ছুটে বেড়ানোর দুপুরগুলো’তে কি ছিল রোদের তীব্রতা?
কারা রয়ে গেল কার কাছে ঋণী,
“সেদিন আমরা আসতে পারিনি…
একা সামলালি…?”… সে’সব ঋণের ওজন আমার মাপতে ভয়!
এক-একটা দিন ভাবলে তবুও 'কি করে পেরেছি' ভাবতে হয়…

আমাদের প্রথম ঘরোয়া জলসা। খাটুনির চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ক্লান্তি’কে প্রশ্রয় দিই নি যত, প্রতিকূলতা ততই গলা তুলেছে সবার ওপরে। ভয়ের উঁকিঝুঁকি… হয়তঃ গুছিয়ে উঠতে পারবো না সময়ে… হয়তঃ দেরী হয়ে যাবে খুব…! তবু সেদিন সবকিছু ‘জাস্ট পারফেক্ট’ ভাবে মিলে যাওয়ার একটামাত্র কারণ… সেদিন খুব সাধারণ একদল কলেজপড়ুয়া বাংলা, ইংলিশ, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, কমপিউটার, মেক্যানিক্যালের বইয়ের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছিল; হয়েগেছিল ইলেকট্রিশিয়ান কিম্বা গিটারিস্ট, অভিনেতা কিম্বা শিল্পী! সামলে নিয়েছিল ২৩০ ভোল্টের চাবুক বা হাতে অগুনতি সূঁচের ক্ষত! প্রতিকূলতার মাথা হেঁট, "কি মারকাটারি মেজাজ রে বাবা!" ঠিকানা… পরশপাথর… ছুঁলেই সোনা করে দেয়!  
             
দুই ঘন্টার অগুনতি রাত, বাইশ ঘন্টা দিন হল;
এক মন ভরা বীজধান নিয়ে এই তো বছর তিন হল…
হাসি’তে করেছি খাটনি উশুল;
আর সেইবার? বেঠিক বেভুল
কার নাম নিলি বেহোঁসি’তে তুই শুনেছি আমরা… নিরুত্তর…
রাস্তার বাঁকে কি লুকিয়ে এলি? আজন্ম চাপা স্বভাব তোর!

রবীন্দ্রভবনে আমাদের প্রথম অনুষ্ঠান সেই সন্ধ্যায়। চাপা উত্তেজনা প্রতিটা চোখে। একটা ছেলে গান ধরল। মুগ্ধতা, শুধু মুগ্ধতা রয়ে গেল! শুধু আমরাই জানলাম মনে মনে, শ্মশানের ধূলো পায়ে লেগে আছে এখনও… দু’সপ্তাহও হয় নি! 

কিছু অভিমানী চাবিকাঠি নেই… কখনও হিসাব করিনি তার; 
সিঁড়ি’তে ফরাসে তোর ধূলো লেগে, তবু বেড়ে যায় কিলোমিটার…
তোর দেশ থেকে প্রজাপতি রঙ,
ছন্দের মত নদীর বিভঙ,
আমার শহরে বৃষ্টি-শিলঙ পাঠাস, আমরা খুব নাছোড়…
সে’সব মিশিয়ে জীবন বিলাবো বইমেলা এলে… প্রতিবছর!

No comments:

Post a Comment